Where to go? This is the question to mass. People don’t know. There is no one to guide but mass want to follow.
রাস্তা যখন সোজা পড়ে থাকে, সামনে থেকে কালো গভীর পথ। এলোমেলো বৃষ্টি এসে সেই কালিমা আরও গাঢ় করে দেয়। আতান্তরে পড়ে খোলা মন। সেখানে বাতাস ঘুলঘুলির ঘুর পথে নিয়ে আসে চড়াইয়ের ঠোঁটে করে খড়কুটোর সন্দেশ। একটা খবরেই মনের আঙিনায় আলপনা দেয়, সে খবর খুব বিরাট কিছু, যে তা নয়। গোবিন্দ এই সব দেখে আর ভাবে, ঠাঁই পায় না। বাজারে দেখা হয় মান্তু দার সাথে। ভদ্রলোক এই কাছাকাছি কোথাও থাকেন, বাজারে সহ-ক্রেতা হিসেবেই তাকে দেখেছে, অন্য কোথাও যে মান্তুদার অস্তিত্ব আছে মনেও হয় না। যেন মান্তু মানেই একটা পুরানো লুঙ্গি, হয়তো লাল ছিল কোনকালে, এখন রঙচটে একটা অন্যরকম কিছু হয়েছে। স্বভাবে একটু সখী ভাব। গলায় গান ও খিস্তি। সব দোকানদারের সাথে তার ঠাট্টার সম্পর্ক। কখনও মাত্রাতিরিক্ত কটু কথায় তিক্ততার সৃষ্টি হয়। গান শুনে মন ভরে। বিরক্ত দোকানদার কুকুরের ডাক ডাকে। মান্তুদা গায়ে মাখেনা অনায়াসে রাগী প্রতিপক্ষকে আলিঙ্গন করে।
আজ মান্তুদা খুব খুশি। তাদের বাড়ির কাজের মাসির মেয়ে সরকার থেকে থেকে সাইকেল পেয়েছে। সেই আনন্দে মিষ্টি কিনছে আর গান গাইছে। লোকে আড়াল নয়, সামনেই বলে, পাগল। মান্তুদা বাছা বাছা খিস্তি উচ্চারণ করে সেই পাগল উপাধি ফিরিয়ে দেয় বক্তার ঊর্দ্ধতন চোদ্দ পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে। সরকার বাইরে থেকে ব্যবসা আনলো কি আনলো না, তাতে মান্তুদা বা তার বাড়ির কাজের মাসির কিছু এসে যায় না। তবে এই সাইকেলটি হওয়াতে মেয়েটি প্রায় দুকিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে পারছে। এটা ওই পরিবারটি এবং ব্যাচেলার মান্তুদার বড় আনন্দের কথা। একই সাথে কন্যাশ্রীর টাকা পেয়েছে, পাচ্ছে দুটাকা কেজি চাল। এই জনমোহিনী কাজের গুঁতোয় হয়তো কোষাগার ফাঁকা হয়ে গেল। কাগজ পড়া মিষ্টির দোকানদার তিলক একবার বলার চেষ্টা করে। মান্তুদাকে সে কথা বলে, খাল কেটে কুমির আনা। খিস্তির এমন সম্ভার খুব কম মানুষের কাছে আছে। থাকলেও অনেকের তা প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকে না। মান্তুদা অমায়িক অর্থাৎ বিনা মাইকে সারা বাজারের সকলকে শুনিয়ে তিলকের ভুত ভাগায়। শেষে অন্যরা মিলে তিলককেই থামায়, যাতে মান্তুদাকে আর উত্যক্ত না করে।
![Where to go now. He couldn't recognize Mantu.](https://sp-ao.shortpixel.ai/client/to_auto,q_glossy,ret_img,w_573,h_1024/https://souravstory.com/wp-content/uploads/2024/01/Where-to-go-now-573x1024.jpg)
গোবিন্দ লক্ষ্য রাখে সব। বাজার ছাড়া আরেক জায়গায় মান্তুদাকে দেখে সেদিন চিনতে পারেনি। আসলে যে মানুষটাকে যেখানে দেখে অভ্যস্থ, তার বাইরে তার যে কোন পরিচয়, থাকতে পারে সেটাই আমাদের অজানা। লাল শালুর পতাকা কাঁধে মিছিলে চলা মানুষটাকে প্রথমে চেনা চেনা লাগলেও বুঝতে পারেনি কে? সেই লুঙ্গি নেই, হাতে বাজারের থলেও নেই। মান্তুদা ঠিক নজর করে গোবিন্দকে। দুরন্তবেগে গালি সহকারে জিজ্ঞেস করেন, “…মরণ, অমন হাঁ করে দেখছিস কি? আমায় তোর পছন্দ হল না কি?” গালি শব্দটি কানে যেতেই টনক ঠং করে বেজে, নড়ে ওঠে। তখন চিনতে আর ভুল হয়না, ইনি কিনি? লম্বা একটা মিছিল। সামনে হুডখোলা গাড়িতে, নেতা। পিছনে সার সার পদাতিক বাহিনীর একজন হয়ে মান্তুদা চলেছে। পরে এক অন্য সময়, দোকানদার তিলক জিজ্ঞেস করে, “কি গো দল বদল করে ফেললে?” গালি শব্দের স্রোত বাঁচিয়ে গোবিন্দ কান পাতে মান্তুদা কি বলে, শোনার জন্য। “…রাস্তা কি পাল্টায়? একসাথে চলার লোক হয়তো পাল্টে যায়”। শুনে তিলক বলে, “বাঃ সুযোগ বুঝে পাল্টি মারলে। এতদিন লাল শালু বয়ে বেড়ালে, আজ হঠাৎ জামা পাল্টে অন্যদলে!”
-“ … তোরা বুঝিস না। আমাদের মতো মানুষের এক্তিয়ার কতটুকু? খাওয়ার জোগাড় করা, আর সেটুকু খেয়ে দিনটা পার করা। সেটা করতেই সময় চলে যায়। ভাবনা করার মত সময় বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই। এতদিন যে দাদা এসে রুটি আলুরদম খাওয়াতে নিয়ে যেত, সেই আসছে ওই একই রকম বা তার চেয়ে ভালো টিফিনের ব্যবস্থা করতে। আমি কি তোদের মতো পাগল, যে যাবো না?” মান্তুদাকেই সবাই পাগল বলে, সে তিলককে পাগল বলায় আসেপাশে সবাই হেসে ফেলে।
মানুষ চলতে চায়, যেকোন ভাবে হোক। খুব বেশি ভাবতে হবে না কোথায় যাচ্ছি। তাদের চলার একমাত্র শর্ত দলবদ্ধ যাত্রা। গন্তব্য ঠিক করার দায়িত্ব তাদের নয়। একমনে হঁটে যাওয়া একমাত্র কাজ। অন্য কেউ হাল ধরে থাকবে। আমি ভার সঁপে দিয়ে হাল্কা হয়ে থাকব পালকের মতো। হাওয়া বয়ে নিয়ে যাবে, হাওয়ার মতো। সে যদি ঝড়ের হাওয়া হয়, তাই সই। ঘরের ঘুলঘুলিতে এক অধটা চড়াই এল বাইরের খবর নিয়ে। তাদের ঠোঁটে ধরা খড়কুটো। সেখানেই লেগে আছে অন্য খবর। রাস্তার খবর। সে রাস্তা বৃষ্টিজলে ভিজে আরো কালো হয়ে ওঠে। সেখানে মান্তুদার মতো অনেকেই। কাজের মাসির মেয়ে সাইকেল চালায়। রাস্তা থাকে রাস্তার মতোই, শুধু চলার সাথী বদল হয়। মান্তুদাদের কথা কোন স্বতন্ত্র কথা নয়। গোবিন্দ রাস্তার পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করে, যাতে দেখা যায় কে কোনদিকে যাচ্ছে। তবে রাস্তার পাশও একটা দিক। এই দিক না অন্যদিক?
[প্রথম প্রকাশঃ খোলামকুচি ব্লগ ১৯ মে, ২০১৬]