দেরাজের ঘ্রাণ

দেরাজের ঘ্রাণ
দেরাজের ঘ্রাণ

what is nostalgia? Described the nostalgic beginning of the story in Bengali, Flavor of Old shelf: Gobi is sitting in front of an old shelf today. Sometimes it’s not a bad idea to go through old untouched documents. How it feels like someone else’s secret information. These papers are related to himself, how it feels to think today. Small notes, mostly list for marketing.

আজ পুরোণ দেরাজ খুলে বসেছে গোবি। অনেকদিনকার না-ছোঁয়া কাগজপত্র ঘেঁটে দেখতে, মাঝে মাঝে মন্দ লাগে না। কেমন অন্য কারো গোপন তথ্যের মতো মনে হয়। এসব কাগজ তার নিজের সাথে সম্পর্কিত, আজ ভাবতেও কেমন লাগে। ছোট ছোট চিরকুট, বেশিরভাগ বাজারের ফর্দ। বাড়ির বাজার, আসেপাশের মানুষের চাহিদা। সময় অসময় গোবি ছাড়া তাদের আর কেইবা আছে? “গোবি একটু বাজারে যাবি বাবা?”, “গোবি ফাঁকা আছিস? একটু লন্ড্রিতে যেতে হত, শাড়িটা পালিশ করতে দেওয়া ছিল”। “গোবি দৌড়ে যা তো, নুন ফুরিয়ে গেছে”। এমন সব নানা অনুরোধ, উপরোধ, আদেশ। গোবির ভালোই লাগে। কত মানুষের কাজে আসছে, এটাও তো একটা কাজ, ব্রত বা সমাজসেবা, সে যাই নাম দেওয়া যাক।

চারিদিকে টুকরো কাগজ ছড়িয়ে তার মাঝখানে বসে ছিল। খুব হাবভাব, যেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। আসলে সে সব কিছু নয়, পুরোণ সময়কে একটু ধরতে, হাতে নিয়ে নাড়তে চাড়তে ভালো লাগে। এই চিরকুট লেখকদের মধ্যে কয়েকজন মানুষ আছেন, যারা আর পৃথিবীতেই নেই। যেমন বোস বাড়ির রতন কাকা। গত বছর শীতে চলে গেলেন। নেই বিন্দির ঠাকুমা। ফর্দতে বড়ি, কাসুন্দী, কালোজিরে আর হিঙ আনতে দিয়েছিলেন।

রতন কাকাদের বড় এজমালি বাড়ি। পুকুর বাগান। একসময় অনেক আয়-যায় ছিল। এখন লোকজন নেই। থাকার মধ্যে রতন কাকা, তার বিধবা দিদি, আর বাড়ির পুরোনো চাকর বংশী। সেদিন সকালে গোবি গিয়েছিল ওদের বাড়িতে খবরের কাগজ পড়তে। এমনি কোন মতে দিন গুজরান হয়, তবে তিনটে খবরের কাগজ রাখে। পাঁচিল ঘেরা চৌহদ্দি। জায়গায় জায়গায় ধসে গেছে। প্রায় দেড়শো বছরের তিন মহলা বাড়ি। বার দালান পেরিয়ে ভেতরে অন্দরমহল। বাড়ির বাইরে একটা পুকুর, আবার খিড়কী দুয়োরে আরেকটা। পিছনেরটা মূলতঃ বৌ-ঝিদের জন্য। চারিদিকে বড় বড় গাছের ছায়া। পুকুরের ঘাটে আবার একটা পাথরে নাম লেখা, পম্পা। রতনকাকা কে একবার গোবি জিগেস করেছিল, পম্পা কার নাম কাকা। কাকা হেসে জবাব দেন, “কোন মানুষের নাম নয়রে, পম্পা ওই পুকুরটার নাম। স্বর্গের পুকুরের নামও পম্পা”। গোবি ঘাড় নাড়ে, ভাবে তাহলে বাইরের পুকুরেরও একটা নাম হবে। জিজ্ঞেস করলে, রতন কাকা উত্তর করেন, “ওটা পুকুর নাকি? ওটাতে পাট জাঁক দেওয়া হত। এখন তো সে সব নেই, তাই ওভাবেই পড়ে আছে”।

Is it a pond?

মাছের চাষ (Pond for fish)

তবে শুধু শুধু ফেলে রাখার মানুষ নন, রতন কাকা। পুকুরে মাছ চাষ করান। সনাতন জেলে কে লিজ দেওয়া আছে। সনাতন নিজের নিয়মে আসে ভোর ভোর মাছেদের চারা ছেড়ে যায়। সপ্তায় একদিন করে পুকুরে নাড়াচাড়া দিয়ে দেখে, মাছেরা বাড়ছে কেমন। তারপর সময় হলে লোকলস্কর এনে জাল ফেলে মাছ তোলে। সে বাবাদ রতনকাকাদের প্রাপ্য টাকা আর কিছু মাছ ভেট করে যায়। সেদিন এমনি ছিল। গোবি ভেতর দালানে খবরের কাগজে মুখ গুঁজে আছে, একটা বেড়াল পায়ের কাছে চিৎপাত হয়ে ঘুমাচ্ছে। বুড়ি পিসি রান্না ঘরের পাট চুকিয়ে নিজের ঘরের ভেতর সেঁধিয়ে গেছে। বংশীকেও কাছে পিঠে দেখা যাচ্ছেনা। এত বড় বাড়ির বেশিভাগ ঘরেই তালা দেওয়া। এক ফালি রোদ এসে উঠানে এসে পড়েছে। যেন কোথাও আর যাওয়ার নেই। এখানে এসেই সময় স্থির হয়ে গিয়েছে। এবাড়িতে ঢোকার সময় দেখেছে পুকুর ধারে, মাদার গাছের নিচে একটা মোড়া পেতে রতন কাকা সনাতনের কাজ তদারক করছে। আজ সনাতন বোধহয় কিছু চারা ছেড়েছে। পুকুরে নেমে জলের মেরামত করতে গিয়ে পাকা জেলেরা এক আধটা মাছ ধরে নিজেদের গামছা বা কোমরের গেঁজে লুকিয়ে ফেলে। বিরাট কিছু নয়, ও সব নিয়ে কেউ তেমন ভাবে না। তবে রতন কাকা শুদ্ধাচারী মানুষ, চরিত্রের গোলমাল সহ্য করতে পারেন না। গোবি হঠাৎ শোনে বাইরে থেকে গোবি-র নাম ধরে রতনকাকা চিৎকার করে ডাকছে। আওয়াজ শুনে বেড়ালটা ধড়মড় করে উঠে পালাল। গোবি কাগজ ফেলে দৌড়ে বাইরে আসে। দেখে সনাতন হাত জোর করে কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আর রতন কাকা ডান হাতের আঙুল তুলে কি সব দেখাচ্ছে। বংশীও হাতের

কাজ রেখে ছুটে এসেছে। গোবি পৌঁছাতেই, রতন কাকা বলে উঠল,

  • গোবি তুমি এখুনি পুলিশে খবর দাও, বংশী তুমি এখনি ওর হাত থেকে জাল কেড়ে নাও।
  • কেন কী হয়েছে?
  • কী হয়েছে? দেখ দেখ আমার সমস্ত মাছ চুরি করে নিয়েছে

গোবি তাকিয়ে দেখে, তিন চারটে বিঘৎ মাপের রুইমাছের বাচ্চা সনাতনের পায়ের কাছে পড়ে আছে। সনাতন হাত জোড় করে বলছে, “বাবু দুশোগ্রাম ওজনও হবে না”।

  • ওজনের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? আমি কি বাজারের মাছওয়ালা? গোবি, বংশী ওকে এই মাদার গাছের সাথে বাঁধো।

গোবি আতান্তরে পরে। সনাতনের দশাসই নৌকা টানা শরীর, ওর সাথে পারবে কি করে? শেষে, রতন কাকার কথা মানতে গিয়ে নিজের হাড়গোড় ভাঙে আর কি? গোবিকে এগোতে না দেখে, রতনকাকা আরো রেগে যায়,

  • এরা কেমন পেয়ে বসেছে, দিনে দুপুরে ডাকাতি? আমি তাই ভাবি প্রতিবার এত মাছ ছাড়া হয়, সব যায় কোথায়? এখন বোঝা যাচ্ছে, এই মালই সব হাতিয়ে নিয়েছে। কি ধড়িবাজ! বাপরে!
    সনাতন মিন মিন করে কিছু বলার চেষ্টা করে, রতনকাকা সেসব কানেই তুলল না। শেষমেষ জালটাল ফেলে সনাতন হঠাৎ করেই দৌড় মারে। জানে কদিন পর রতনকাকা এমনি ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন, হয়তো নিজে রতনের বাড়িতে জাল পৌঁছে দিয়ে আসবে।

রতনকাকার চিরকুটে লেখা ছিল, পাঁচ কিলো সরষের খোল, দুইগোছ বাংলাপাতা পান, একশো গ্রাম সুপুরী আর আড়াইশো বাতাসা। মানুষটা চলে গেছে, তবু তার হাতে লেখা সামান্য কটা অক্ষর গোবি যত্ন করে তুলে রাখে। বন্ধ দেরাজের ঘ্রাণ একমুহর্তে তাকে নিয়ে যায় কোন এক অপার্থিব আবহাওয়ায়।

[প্রথম প্রকাশঃ খোলামকুচি ব্লগ ১৪ জুলাই, ২০১৬ ]

আরও পড়তে পারেনঃ ঘুড়ি

Facebook Comments Box

আমি ইমেল-এ খবরাখবর পেতে আগ্রহী