গল্পঃ ঘুড়ি

ঘুড়ি
ঘুড়ি

Traditional ways of enjoyment is taken over by the necessity of new civilization.

সাবু জ্বাল দিচ্ছিল গোপাল। তার ভেতর কয়েকটা তুঁতের দানা ছড়াতেই কেমন সবুজ হয়ে গেল। একটু গঁদের আঠা, সাথে আরেকটু রঙ।

স্কুল থেকে ফিরে, কোনমতে নাকে মুখে ভাত গুঁজে ঋষি ছোটে গোপালদার বাড়ি। ঋষিকে কাঠের গেট ঠেলে ঢুকতে দেখে আশ্বস্ত হয় গোপাল। হুকুম করে, “পাশের ঘর থেকে ছয় কর্ডের সরু সুতোর দুটো রিল নিয়ে আয়।”
তেরো বছরের ঋষির কাছে বছর বাইশের গোপালদা, গড ফাদার। ওর কাজে সাকরেদি করা এক বিশাল পাওনা। ঘুড়ির মাঞ্জা, তুবড়ি বানানো, সাঁতার কাটা সবকিছুতেই গোপালদা তুখোর। গৌতম, পঞ্চা, লাট্টু এগিয়ে যুগিয়ে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। ঋষির মর্নিং স্কুল, তাই অন্যদের আসার আগেই গোপালের সাথে সেঁটে যেতে পারে।

সুতো নিয়ে ঘরে আসে ঋষি। গোপাল যেন ল্যাবোরেটারিতে কর্মরত কোন বিজ্ঞানী! সামনে ছড়ানো, ঘুড়ি বানানোর নানা রঙের কাগজ, কাঁচি, কাঠি, মাঞ্জা তৈরীর সরঞ্জাম, বাসন। মাঝখানে ইলেকট্রিক হিটারে একটা বড় পাত্র। সাবু জ্বাল হচ্ছে। তার মধ্যে নানা রকমের নানা রঙের মশলা যোগ হচ্ছে। ঋষি মুগ্ধ হয়ে সেই অসাধারণ পরীক্ষা নিরীক্ষা দেখতে থাকে।
“তুঁতে দিলে কী হয়?” ঋষির অনেক প্রশ্ন জমে থাকে।
“পোকায় কাটে না। সাবু বা ভাতের গন্ধে পোকা ধরে যায়।” গোপালের কাছে সবকিছুর জবাব রয়েছে।
এরপর গোপাল হুকুম করে, কাচের গুঁড়োর পাত্রটা নিয়ে আসার জন্য, সাথে আটা চালার চালুনি। গোপাল সাবধানও করে, “খবরদার! কাচে হাত দিবিনা। তোর কচি হাত, কখন ফুটে থাকবে, টের পাবি না।”
‘কচি’ শব্দটাতে ঋষির অপমান বোধ হয়, কিন্তু মুখে প্রতিবাদ করে না। গোপাল খুব সন্তর্পনে চালুনি দিয়ে মিহি কাচের গুঁড়ো আলাদা করে নিতে থাকে। ঋষিকে বলে, “সুতোর রিলগুলো গরম জলে ভিজিয়ে রাখ। তারপর নারকোলের ছোবড়ায় ঘষে ঘষে লাটাইএ গোটা।”
“ভিজে গেলে সুতো নষ্ট হবে না?” ঋষির গলায় উদ্বেগ।
“নতুন সুতোয় মোম লাগানো আছে। ওগুলো না তুললে, মাঞ্জা হার্ড হয়ে যাবে। সাবধানে করবি, জট পড়ে গেলে মুশ্কিল!”
কাজ পেয়ে খুশি হয়ে যায় ঋষি, একটু আগে শোনা ‘কচি’ শব্দের অপমানের রেশ মিলিয়ে যায়।

ততক্ষণে পাউডারের মতো মিহি কাচের গুঁড়ো মিশে মাঞ্জা প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। এর পর লাটাই, মাঞ্জার পাত্র আর কিছু নরম সুতীর কাপড়ের টুকরো নিয়ে দুজনে বাইরে আসে। পরপর দুটো ল্যাম্পপোস্টে সুতো জড়ানো শুরু হয়। সামনে সামনে লাটাই হাতে ঋষি চলেছে, এক ল্যাম্পপোস্ট থেকে সুতো ঘুরিয়ে পরের ল্যাম্পপোস্ট পর্যন্ত যাচ্ছে, আবার সেই ল্যাম্পপোস্ট জড়িয়ে আগেরটাতে ফিরে আসছে। ঋষির পিছন পিছন গোপাল চলেছে হাতে সুতীর কাপড়ের টুকরোতে মাঞ্জা লাগিয়ে সুতোটাকে রাঙিয়ে দিচ্ছে। মাঞ্জায় কাচ রয়েছে বলে, ঋষিকে ধরতে দেয় না। দুটো হাজার মাপের সুতোয় মাঞ্জা দিতে, বেশ ভালো সময় লাগে। গৌতম, পঞ্চা, লাট্টুরাও এসে হাজির। ততক্ষণে কাজ প্রায় শেষ। আজ ওদের চোখে ঋষির নিজেকে হিরো মনে হচ্ছিল। বাতিস্তম্ভ জুড়ে নতুন মাঞ্জার সুতো শুকোতে থাকে। একটা অন্যরকমের ঘ্রাণ নাকে আসে।

বিশ্বকর্মা পুজোর বেশি দেরি নেই। আকাশের কালো কালো মেঘগুলো ছুটি নিয়ে নিচ্ছে। ফাঁক ফোঁকর গলে নীল রঙ বেরিয়ে পড়ছে। ঋষিদের মনে গভীর আনন্দ বুড়বুড়ি কাটে। ওই নীল আকাশের চাঁদোয়াতে পেটকাঠি, চাঁদিয়াল ভাসবে।

শহরতলির এই শিল্পাঞ্চলে পর পর পাটকল, স্টিল, ফাউন্ড্রি, অক্সিজেন, কেমিক্যাল সহ ছোট বড় অনেক কারখানা। একদিকে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী গঙ্গা অন্যদিকে লাট সাহেবের চলাচলের জন্য তৈরি ব্যারাকপুর ট্র্যাঙ্ক রোড। সকাল ন’টার ভোঁ-য়ের সাথে জড়িয়ে থাকা জনজীবনের নিঃশ্বাস, স্কুলের গাড়ি, ট্রেন আসার সময়, আপিসমুখী কর্তার গরম ভাত।

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকালেই ঋষি স্নান করে প্রস্তুত হয়ে যায়। আজ মা বাবার প্রশ্রয় থাকে। পড়াশুনা নিয়ে কেউ তেমন কিছু বলে না।

সবাই মিলে বঙ্গসূর্যের মাঠে। সেখানে ঘুড়ির লড়াই। বঙ্গসূর্য এখানকার বিখ্যাত কটনমিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে, যখন সবাই বিলিতি পোশাক বর্জন করছে, দেশীয় কাপড়ের যোগান দিতে উদিত হয়েছিল বঙ্গসূর্যের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাদের কারখানার দরজা, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন উন্মুক্ত হয়ে যায়। ওদের মাঠে হইহই করে সবাই ঘুড়ি ওড়ানোর মজায় মেতে ওঠে। পঞ্চা, লাট্টু, গৌতম, ঋষি সহ আরও অনেকে, আর ওদের পান্ডা গোপালদা। গোপালের মাঞ্জা আর ঘুড়ির প্যাঁচ খেলার কেরামতি এলাকায় বিখ্যাত। একের পর এক প্রতিপক্ষের ঘুড়ি কেটে গোপালের চাঁদিয়াল আকাশে রাজার মতো উড়ে বেড়ায়। নিচে ওরা সবাই মিলে ঢোল কাঁসর সহযোগে সেই রাজার অভিষেক করে।

দুপুরে কারখানার পুজোতে ভোগ রান্না হয়। সবাই মিলে পাত পেড়ে খায়। ঋষিদের পাড়ার অনেকেই এই কারখানায় কাজ করে, তাই শুধু ঘুড়ি ওড়ানোয় নয়, কারখানার ভেতর কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেগুলো দাপিয়ে বেড়ায়। গোপাল ওদের কনভেয়ার বেল্ট চেনায়, দেখায় স্পিনিং মিল, ক্যান্টিন, ওভারহেড ক্রেন। কেমন করে শিস দিয়ে ওপরে বসে থাকা অপারেটরের সাথে কথা হয়। গোপাল বুঝিয়ে বলে, “শিস না দিতে পারলে, এই চাকরি করা যায় না।” ঋষিরা অবাক চোখে গিলতে থাকে।

সন্ধের পর প্রতিটি কারখানায় কোনও না কোন অনুষ্ঠান হয়। নামী শিল্পীদের নিয়ে জলসা অথবা কোন বিখ্যাত জাদুকরের ম্যাজিক শো। ঋষি অবাক হয়ে থাকে! রাস্তায় ভীড় বাড়তে থাকে। এইসব কারখানায় কাজ করা শ্রমজীবী মানুষের ঢল নামে। তাদের অর্থের সামর্থ নেই, তবু মনের জৌলুসে নিজেদের সাজিয়ে নিয়ে পথ চলে। গোপালের হাত ধরে, এক কারখানা থেকে অন্য কারখানা ঘুরে বাড়ি ফেরে ঋষি, তখন অনেক রাত। পরদিন থেকে আবার স্কুল। ঘুমিয়ে পড়ার মুহূর্তে আকাশে উড়তে থাকা রঙিন ঘুড়িগুলো ঋষির চোখের সামনে ভাসতে থাকে।

কৈশোরের দিনগুলো এমনই কাটছিল। এর মধ্যে ঋষির বাবার বোম্বাই বদলির খবর হল। আপাততঃ ওরা ওদের মামাবাড়িতে উঠে যাবে। সেখান থেকে মাস ছয়েক পর ঋষির বাবা, নতুন কর্মক্ষেত্রের শহরে নিয়ে যাবে। লরির পিছনে লটবহর নিয়ে ঋষিরা যেদিন পাড়া ছাড়ল, অনেকের চোখ ভিজে এসেছে। ওরা যে এই পাড়াতে ভাড়া থাকত, এটাও সবার জানা ছিল না। ঋষির মামাবাড়ি, এখান থেকে প্রায় দশ বারো কিলোমিটার দূর। গোপাল মাঝে মাঝে সাইকেল নিয়ে চলে আসত, মামাবাড়ির পাড়ার মাঠেও ঘুড়ি উড়িয়ে গেছে। কিন্তু সে আনন্দ বঙ্গসূর্যের মাঠের মতো হয় নি।

মাস ছয়েকের মধ্যে মামাবাড়ির পাটও চুকল। ঋষি, বাবা মা-র সাথে বোম্বাই চলে গেল। গোপালদের সাথে কিছুদিন চিঠিপত্রে যোগাযোগ থাকল, তারপর যে যার গন্ডীতে ব্যস্ত হয়ে যায়। মাঝে একবার গোপালদার বিয়ের নিমন্ত্রণের চিঠি এসেছিল। গোপালদা এখন বঙ্গসূর্যেই ওভারহেড ক্রেন ওপারেটরের কাজ কাজ করে। ঋষিরা যেতে পারেনি, তবে উপহার স্বরূপ ঋষির বাবা কিছু টাকা মানি অর্ডার করে পাঠিয়ে দিয়েছে।

ঋষি পড়াশুনা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে। কলকাতার সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই। এক মারাঠী সহকর্মী বন্দনাকে বিয়ে করেছে দুবছর হল। এর মধ্যে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে, ঋষির বাবাও চলে গেছে। মা আর স্ত্রীকে নিয়ে, মুম্বাইতেই ছোট ফ্ল্যাটে থাকে। একদিন বন্দনার আপিসে, অনসাইট যাওয়ার সুযোগ আসে। চাইলে, ঋষিও সাথে যেতে পারে। ঋষির মনে মা-কে নিয়ে চিন্তা হয়। ওকে তো আর মুম্বাইতে একা রেখে যাওয়া যাবে না। সব শুনে, ঋষির মা বলে, “এবার তোরা নিজেদের মতো বুঝে নে।”
ঋষি অবাক হয়ে বলে, “মানে?”
“মানে কিছু না। আমি আমার মাটির কাছে ফিরে যেতে চাই। তোর বাবার জন্য এই শহরে আসা। তারপর তোর পড়াশুনা, নিজের পায়ে দাঁড়ানো। এখন তোকে দেখবার লোকও এসে গেছে, আমায় এবার ছুটি দে। আমি আর তোদের সাথে ছুটে ছুটে এক শহর থেকে অন্য শহরে উড়ে বেড়াতে পারব না। আমার ডানার জোর কমে গেছে।”
ঋষি বলে, “কলকাতায় ফিরে থাকবে কোথায়? আমাদের তো বাড়ি নেই?”
“তুই মামাবাড়ির কাছে আমায় একটা ছোট ফ্ল্যাট কিনে দে। তোর বাবার জমানো টাকা তো রয়েছে, আমার ওতেই হয়ে যাবে।”
ঋষি ভাবে। তারপর বলে, “ঠিক আছে, মামাকেই বলো। একটা ফ্ল্যাটের খোঁজ দিতে।”

ঋষির মামা বিমলবাবুর বয়স হলেও, এখনও বেশ করিৎকর্মা মানুষ। চটপট কয়েকটা ফ্ল্যাটের খোঁজ দিয়ে ঋষিদের বলে, “এসো একবার সবাই মিলে ঘুরে যাও। সবকটা ফ্ল্যাট দেখে, একটা পছন্দ করে নাও।”

ঋষি আর বন্দনার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। যাওয়ার আগে তিনজনে একবার কলকাতায় আসে।
প্রায় বাইশ বছর পর পুরানো এলাকায় পৌঁছে ঋষি ছেলেবেলার কোন স্মৃতি মেলাতে পারে না। বড় বড় শপিং মল, উঁচু উঁচু আবাসন, বহুজাতিক বিপণি দেখে, মুম্বাই না ব্যঙ্গালোর চিনতে পারে না।

ঋষির মামা বিমলবাবুর পছন্দ আছে মানতে হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাট-ই কোন না কোন আবাসনের মধ্যে। সেখানে আধুনিক বিলাসের সব বন্দোবস্ত করা আছে। এমনই একটা আবাসনের উনিশ তলায় একটা ফ্ল্যাটে উঠে দূর থেকে গঙ্গা দেখতে পেয়ে ছোটবেলার মতো, ঋষি উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বিমলবাবুও এই আবাসনে উঠে আসার পরিকল্পনা করছে। যদি ঋষির মা আসে, তাহলে দুটো ফ্ল্যাট বুক করে দেবে।

বেলা তিনটে পার হয়েছে। বর্ষা যাব যাব করেও আটকে আছে। অনেক নিচের আকাশে বেশ কিছু ঘুড়ি উড়ছে। ঋষির মনে বহু পুরোনো স্মৃতি ভীড় করে আসে। মামাকে জিজ্ঞেস করে, “এখন ঘুড়ি উড়ছে?”
“বাঃ বিশ্বকর্মা পুজো এসে গেছে তো?”
“তাই তো! ভুলেই গেছিলাম।”
মনে মনে হিসেব করে নেয়, সতেরোই সেপ্টেম্বর বেশি দেরী নেই। ছোটবেলার দিনগুলোতে ফিরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই এলাকা ও কিছুই চিনতে পারছে না।

ঋষি, মা কে জিজ্ঞেস করে, “তোমার পছন্দ?”
“আমার আর কী? দাদা পাশে থাকবে, তাহলেই হবে। তোরা কখনও যদি কলকাতা আসতে চাস, পারবি।”

একজন বয়স্ক নিরাপত্তা রক্ষী ওদের চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফাঁকা ফ্ল্যাটগুলো দেখাচ্ছিল। নিচে নেমে এসে ঋষি জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এই জায়গাটায় আগে কী ছিল? আসলে আমি অনেক ছোটবেলায় এখানে থাকতাম। কিন্তু এখন তার কিছুই চিনতে পারছি না।”
“এটা বঙ্গসূর্য কটন মিল ছিল।”
কথাটা শুনেই ঋষির বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে, “এটা বঙ্গসূর্য?”
“হ্যাঁ তো। আপনি এখানে আগে এসেছেন?”


স্বপ্নোথ্থিতের মতো ঋষি বলে, “আমরা ঘুড়ি ওড়াতে আসতাম। বিশ্বকর্মা পুজোর দুপুরে পাত পেড়ে ভোগ প্রসাদ পেতাম, রাতে অর্কেস্ট্রার গান শুনতাম।”
বয়স্ক লোকটির চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। হাত দিয়ে একেকটা গগনচুম্বী বাড়ি দেখায় আর বলে, “ওদিকটা স্পিনিং মিল, এপাশে ক্যান্টিন, ওখানটায় পুজো হত, এদিকটায় ঘুড়ি ওড়ানোর মাঠ।”
লোকটার কথা বলার ভঙ্গী যেন খুব চেনা, ঋষি একটু থমকে বলে, “তুমি মানে আপনি কি গোপাল দা? আমি ঋষি, চিনতে পারছো?”

লোকটি মাথা থেকে টুপি খোলে। বয়সের তুলনায় অনেক বৃদ্ধ দেখায়। অন্যদিকে ঋষি পরিপূর্ণ যুবক, প্রাপ্তিতে যোগ্যতায় আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। তবে গোপালকে ঋষির চিনতে ভুল হয় না। ঋষি বলে, “কিন্তু তুমি তো এই মিলেই কাজ করতে, তাই না?”
“হ্যাঁ, তারপর মিল বন্ধ হয়ে গেলো। আমরা বেকার হয়ে গেলাম। কিছুদিন ট্রেনে হকারি করলাম, কিছুদিন সাইকেল সারানোর দোকান, চাওমিন বিক্রি করেছি, অটো চালানো শিখেছি। এসব করতে করতে সময় গড়াতে থাকে। জমির হাত বদল হয়। আবাসন তৈরী হল। পার্টির দাদাদের গিয়ে ধরলাম। বহু কষ্টে সিক্যুরিটি গার্ড-এর কাজ পেলাম। তখন থেকে এখানেই।”

ঋষির মনের আকাশে তখন অনেক ঘুড়ি। কয়েকদিনের মধ্যে বিদেশ যাবে। সামনে নতুন জীবনের হাতছানি। আর মা-র জন্য এই দামী আবাসনের অনেক উঁচু তলায় একটা সুরক্ষিত ঘর। লাল নীল কমলা ঘুড়ির মতো, সেই সব স্বপ্নরা উড়ছে। সবই যেন হঠাৎ কাটাকুটি হয়ে গেল। ভোকাট্টা হয়ে ওরা হাওয়ায় হাওয়ায় উড়েই চলেছে, ভেসে চলেছে, কোন অনির্দেশ পথে, ঋষি জানে না।

[প্রথম প্রকাশঃ ২০২২ প্রকৃতি আবাসন স্মারক পত্রিকা]

Facebook Comments Box

আমি ইমেল-এ খবরাখবর পেতে আগ্রহী

This Post Has 21 Comments

  1. আগন্তুক

    ভাল লাগল

    1. সৌরভ

      ধন্যবাদ

  2. Amitava Bhattacharjee

    খুব ভাল লাগলো রে….আমি এখন যেখানে থাকি, সেখানেও একটা কারখানা ছিল…মৃণালিনী সিনেমা হলে ছবি দেখতে এসে ব্ল্যাকারের পিছনে পিছনে ছুটতে ছুটতে সেই কারখানায় ঢুকে গিয়েছিলাম একবার..তখন কি ভাবতে পেরেছিলাম যে কোনোদিন এখানেই আমার বাসস্থান হবে ….এটাই বাস্তব এখন….তোর বলিষ্ঠ লেখনী সেটা পরিপূর্ণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে

    1. Sourav Howlader

      তুই পড়ছিস জেনেই সুখ

  3. ANGSUMAN GHOSH

    খুব ভালো লাগল। শেষের চমকটি বেশ।

    1. Sourav Howlader

      আপনি পড়ছেন জেনেই সুখ

  4. Amiya Bhusan Sarkar

    ওঃ ছোটোবেলায় ফিরে গেলাম।

  5. Sandhya

    ভালো লাগলো।

    1. Sourav Howlader

      অনেক ধন্যবাদ

  6. অমৃতা রায়

    খুব ভালো লাগল। ছোটবেলায় এমনই এক মফস্বলে আমি দিন কাটিয়েছি। হই হই করে সেসব জায়গায় বিশ্বকর্মা পুজো হত। এখন অধিকাংশ কারখানা বন্ধ। খুব জানতে ইচ্ছে করে তাঁরা এখন কী করেন,কীভাবে দিন গুজরান করেন।

    1. Sourav Howlader

      সেভাবে খুঁজলে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তবে সময়ের স্রোতে মিশে যাওয়াই বোধহয় ভবিতব্য।

  7. Labani Sarkar

    দারুণ দাদা।

    1. Sourav Howlader

      ভাল লাগলেই সার্থক

  8. Pinaki Tewari

    Ghuri jeno jiboner ghurnipak.Othe name kate samoyer mato.Apurbo bunot golper.Likhe chol.Porte thaki moner sukhe.

  9. SANKHA GHOSH

    একদম বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি গল্পটা। শৈশব, কৈশর, যৌবন ও বার্ধক্য নিয়ে লেখা। আমাদের সবার জীবনের এই চারটি কাল কে যদি জোড়া করা যায় তবে অনেকেরই জীবন এক বৃত্তের মতন।এর পরের প্রজন্মের ক্ষেত্রে মনে হয় সেটা প্রযোজ্য হবে না।

    1. Sourav Howlader

      হয়তো তাই। তবে প্রত্যেক প্রজন্মে কিছু সংগ্রাম থাকে। সে সব হয়তো সেই যুগের লেখকের কলমে ধরা পড়বে।

  10. Tirthapratim Banerjee

    Khub chuye gelo mon taa tor ei golpo taa pore. Amader chotobelaar anek smriti bhir thele upore uthe asche. Eirokom anek Gopal Daa aar Rishi r moto relation amader jiboner saathe jukto. Chotobela taa harate chai naa – tai tor ei golpo r haath dhore pechone phire takkate paarlaam. Just keep it up – apekhai roilaam. Aro ei rokom smriti r pahaar theke notun golpo tor kaach theke paoar.

    1. Sourav Howlader

      তুই পড়ছিস জেনেই সুখ

  11. Swabarna Chakraborty

    খুব চেনা ঘটনা।মনে পরে গেল।ভালো লাগলো। 🙏

    1. Sourav Howlader

      ভাল লাগলেই সার্থক

    2. Sourav Howlader

      অনেক ধন্যবাদ

Comments are closed.